ভ্রমণ আর পর্যটন বলতে আমি শুধু পাহাড়, সমুদ্র বা অরণ্য বুঝি না। প্রতিটি ঋতুকেও দারুণভাবে উপভোগ্য করে তোলা যায় পর্যটন আর ভ্রমণের সাথে মিলিয়ে। বৃষ্টিতে পাহাড় যেমন দারুণ উপভোগ্য, তেমনি সমুদ্রও অপূর্ব। আর শীত তো যে কোনো জায়গায় ভ্রমণের জন্য আদর্শ। কিন্তু এ ধরনের পর্যটন ভাবনা মোটামুটি অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু পর্যটনকে সত্যিকারের উপভোগ্য, যুগোপযোগী আর টেকসই হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গ্রামীণ, মফস্বল বা ছোট ছোট জনপদকেও পর্যটনেরর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর এক্ষেত্রে শীত ও শীতের সময়ে অপূর্ব গ্রামীণ জনপদ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য উত্তরবঙ্গ হতে পারে প্রথম আর আদর্শ অঞ্চল।
কেননা, উত্তরবঙ্গের প্রথম শীতে গ্রামীণ জনপদে ঘুরে ঘুরে কুয়াশা মাখা ভোর, মিষ্টি রোদের সকাল, অলস দুপুর, মিহি বিকেল, ধোয়া ওঠা সন্ধ্যা, তারা ভরা রাত দারুণ উপভোগ্য যে কোন জায়গা থেকে। এখানে প্রায় পুরোটাই নদী-নালাহীন সমভূমি বলে সাধ মিটিয়ে উপভোগ করা যায় প্রথম শীতের আমেজ। জানা-অজানা নানা জায়গা উপভোগ করা যেতে পারে। রয়েছে মজার মজার আঞ্চলিক খাবার ও মিষ্টান্ন। আর এসবের ফাঁকে ফাঁকে উপভোগ্য হয়ে ওঠে প্রথম শীতের অপূর্ব প্রকৃতি।
উত্তরের সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামের একেকটা গ্রামীণ জনপদ এই শীতের শুরুতে একেক রকম প্রকৃতির আমেজ নিয়ে নিজেদের জাহির করে। কোথাও দিগন্ত বিস্তৃত হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, কোথাও শিশির মাখা সবুজ ধানক্ষেত, কোথাও ধোয়া ওঠা নিরব জনপদ, আবার কোথাও অলস দুপুরের বিলাসী আহ্বান, আর রাতে আলতো শীতের মেঠো পথে তারা ভরা আকাশের হাতছানি। রয়েছে সমতলের চা বাগান, ফলের বাগান, ফুলের গন্ধ, পিঠা পুলি, কালাইরুটি, আচার, চাটনি আর নানা রকম ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচয়। এভাবেই এই শীতের শুরুতে আমরা চাইলেই উপভোগ করতে পারি নতুন নতুন গ্রামীণ জীবন আর পরিচিত হতে পারি ভিন্ন রকম পর্যটনের সাথে। যা আমাদের সামনে খুলে দিতে পারে নতুন ও টেকসই পর্যটনের দিগন্ত।
উত্তরবঙ্গের যে কোনো প্রান্তে যাওয়া সবচেয়ে সহজ। কারণ এ অঞ্চলে যেতে বাস ও ট্রেন দুই বাহনেরই সহজলভ্যতা রয়েছে। ভাড়াও সাধ্যের মধ্যে। আর প্রায় সব জেলা বা উপজেলাতেই পাওয়া যায় সাধ্যের মধ্যে পরিচ্ছন্ন আবাস। আর খাবারের স্বাদ ও বৈচিত্রের কথা বলাই বাহুল্য। তাই শীত শুরুর এই সময়টি হতে পারে উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ ও উপভোগের আদর্শ।