ভ্রমণের প্রতি এক অদ্ভুত টান আমার ছোটবেলা থেকেই। আর ঐতিহাসিক কোনো স্থান ও তার ইতিহাস জানার প্রতি অনুরাগ সবসময়ই ছিল। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জমিদারবাড়ি, পুরাকীর্তি ইত্যাদি। তেমনই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা বা পুরাকীর্তি হচ্ছে ইদ্রাকপুর দুর্গ। একদিন হঠাৎ করেই ঘুরতে চলে গেলাম সেখানে। ভ্রমণপিয়াসী ও ইতিহাস অন্বেষণকারী যারা রয়েছেন, তাদের এবার এই স্থাপনাটি সম্পর্কে জানাই।
ইদ্রাকপুর দুর্গ মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত। এই দুর্গটি মুঘল স্থাপত্যের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। বাংলার সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রীস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জ জেলার তদানীন্তন ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে এই দুর্গ বা কেল্লাটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, কেল্লাটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয় ১৬৫৮ সালে এবং ১৬৬০ সালে তা শেষ হয়। দুই ভাগে বিভক্ত এই দুর্গটির প্রাচীরের উত্তরাংশে কামান বসানোর তিনটি মঞ্চ রয়েছে। প্রায় ৮২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭২ মিটার প্রস্থের আয়তাকার ইটের তৈরি এই দুর্গটি তৎকালীন মগ জলদস্যু ও পর্তুগিজদের আক্রমণের হাত থেকে অত্র অঞ্চলকে রক্ষা করার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
দুর্গটিতে একটি সুড়ঙ্গপথ রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, সুড়ঙ্গপথে ঢাকার লালবাগ কেল্লার সাথে এই দুর্গের যোগাযোগ ছিল। দুর্গটির প্রধান ফটক উত্তর দিকে। দুর্গের প্রাচীরের চার কোনায় উঁচু আয়তাকার বুরুজ। বুরুজের দেয়ালে ছিদ্র রয়েছে, যাতে অস্ত্র তাক করা যায়। দুর্গের তুলনামূলক কম পরিসরের অংশে রয়েছে একটি প্রাচীরবেষ্টিত বৃহদাকৃতির গোলাকার ড্রাম। উন্মুক্ত চত্বর থেকে ড্রামের অংশে পৌঁছানোর জন্য একটি পথ রয়েছে।
দুর্গটির তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই চারটি নদী—ইছামতি, ধলেশ্বরী, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা। তৎকালীন সময়ে ভৌগোলিক ও সামরিক কারণে জায়গাটির আলাদা গুরুত্ব ছিল। ১৯০৯ সালে মুঘল স্থাপত্যের এই অনন্য নিদর্শন ইদ্রাকপুর কেল্লাকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির মর্যাদা দেয়া হয়। প্রাচীর ঘেরা এই গোলাকার দুর্গটি এলাকায় এসডিও কুঠি হিসেবে পরিচিত।
১৮৪৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ইদ্রাকপুর দুর্গ মহকুমা প্রশাসনের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় ইদ্রাকপুর দুর্গে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। যার ফলে ইদ্রাকপুর দুর্গের জনপ্রিয়তা ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কীভাবে যাবেন?
মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের পুরাতন কোর্ট অফিসের কাছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ডিসি পার্কের পাশেই ইদ্রাকপুর দুর্গের অবস্থান। রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে মুন্সীগঞ্জ দিঘিরপার পরিবহনের বাসে করে মুক্তারপুর এসে সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কিংবা রিকশায় করে ইদ্রাকপুর দুর্গে আসতে পারেন।