খুলনা—নাম শুনলেই চোখে ভাসবে চুইঝালের মাংস। মুরগি, খাসি নাকি গরু, কোনটা রেখে কোনটা পছন্দের শীর্ষে থাকবে, তা নিয়েও হিমশিম খেতে হয় ভোজন রসিকদের। দক্ষিণাঞ্চলের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি চুইঝালের মাংস। খুলনায় যাবেন আর চুইঝালের মাংস খাবেন না, তা হতে পারে না। দেশের কিংবা বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিরা খুলনা গিয়ে চুইঝালের মাংসের স্বাদ নেন।
বহু বছর ধরেই এই খাবার মন জয় করেছে দেশি-বিদেশি মানুষদের। প্রতিদিন খুলনার বিভিন্ন এলাকা তো আছেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই খাবারের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন ভোজন রসিকরা। রান্নার অসাধারণ স্বাদ পরখ করতে এ দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরাসহ বিনোদন ও খেলার জগতের অনেক তারকা খুলনায় এসেছেন কামরুল হোটেলে।
স্টিলের বড় গামলায় ভর্তি করা তেল-মসলায় মাংসের মধ্যে দেখা যাবে আস্ত রসুন আর লম্বা করে কাটা চুই। খুলনার ফুডকোর্ট, নামিদামি রেস্তোরাঁর ফাস্টফুডের প্রতিযোগিতায় খুলনার এই ঐতিহ্যবাহী খাবার এখনো স্বগর্বে টিকে রয়েছে।
হোটেলের প্রবেশ পথেই পার্কিং জোনে ব্যক্তিগত গাড়ি আর মোটরসাইকেলের সারি। পরে একটি যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে টেবিল খালি পাওয়ার জন্য। তবে রেস্তোরাঁটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় কিছুটা কম ভিড় হয়।
কামরুল হোটেলের ইতিহাস
জনপ্রিয় এই কামরুল হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা জাফর আলী সরদার ১৯৮৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। খুলনার রেস্তোরাঁ জগতে কিংবদন্তি জাফর আলী সরদার বহুবছর আগে থেকে নিজের এলাকায় ভালো বাবুর্চি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পরে নিজস্ব রান্নার কৌশল চুই ও রসুনের মিশেল ঘটিয়ে খুলনাঞ্চলের রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ইতিহাসের জন্ম দেন তিনি। রেস্তোরাঁ ব্যবসার প্রথম থেকে তিনি নিজেই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর চার ছেলেকে শিখিয়ে দেন রান্নার কৌশল। পরে তাঁরাই এই ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন। তাঁর চার ছেলের এক ছেলেই হলো এই কামরুল।
এ হোটেলের মূল শাখা ছাড়া অন্য কোনো শাখা নেই। প্রতিদিনই সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত খাবার খেতে আসতে পারবেন এখানে। সকাল থেকে প্রতিদিন কয়েকবার চলে রান্নার আয়োজন এবং বেলা ১১টার মধ্যে রান্না শেষ করে বিক্রির জন্য পরিবেশন শুরু হয়।
দরদাম
এখানে মাংস বিক্রি হয় পিস হিসেবে। প্রতি পিস গরুর মাংস ১১০ টাকা, খাসির মাংস ১২০ টাকা, মুরগির মাংস ৭০ টাকা, ডিম ২৫ টাকা, ভাত ফুল প্লেট ১৫ টাকা ও হাফ প্লেট ১০ টাকা করে।
চুইঝালের উপকারিতা
চুইগাছের কাণ্ড বা লতার ব্যবহার হয়ে থাকে। দেড় থেকে দুই ইঞ্চি টুকরো করে কেটে কাণ্ড বেশি মোটা হলে মাঝখান দিয়ে ফেড়ে দুই, চার বা ছয় টুকরো করে খাবার রান্নার সময় যোগ করতে হয়। রান্নায় চুইয়ের ব্যবহারে খাবারের স্বাদে কিছুটা ঝাল বাড়ে। আর সেই সঙ্গে রান্নায় আলাদা সুঘ্রাণ তৈরি হয়। এর কাণ্ড, শেকড়, পাতা, ফুল ও ফল ভেষজ গুণসম্পন্ন। চুই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, খাবারের রুচি বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে, ক্ষুধামন্দা দূর করে, শরীরের ব্যথা সারায়, কাশি, কফ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া সারাতে কার্যকর ও সদ্যপ্রসূতি মায়েদের শরীরের ব্যথা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে বলে জানা যায়।
হোটেল মালিক কামরুল সরদার জানান, প্রতিদিন খুলনার পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের দেশি গরু, খাসি নিজেদের তত্ত্বাবধানে জবাই করে মাংস সংগ্রহ করেন তাঁরা। দৈনিক আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কেজি করে মাংস সংগ্রহ করেন রান্নার জন্য।
যেভাবে যাবেন
খুলনা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে জিরো পয়েন্টে কামরুল হোটেলের অবস্থান। হোটেলের খাবারের স্বাদ নেয়ার জন্য সর্বপ্রথম খুলনা শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানে খুলনায় আসা যায়।